যুক্তরাষ্ট্রের ৩০ দিনের যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবে ইউক্রেন রাজি হলেও নিরাপত্তা নিশ্চয়তা নিয়ে উদ্বেগ রয়ে গেছে। রাশিয়ার শর্ত ও যুদ্ধবন্দী বিনিময়ের বিষয়ে বিস্তারিত জানুন।

যুক্তরাষ্ট্রের যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব ও ইউক্রেনের অবস্থান
যুক্তরাষ্ট্রের দেওয়া ৩০ দিনের যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবে ইউক্রেন সম্মতি জানিয়েছে, তবে এখনো চূড়ান্ত শর্তাবলী নির্ধারিত হয়নি। এই যুদ্ধবিরতির বিনিময়ে যুক্তরাষ্ট্র ইউক্রেনকে পুনরায় সামরিক সহায়তা ও গোয়েন্দা তথ্য সরবরাহ করবে।
গত সপ্তাহে ওভাল অফিসে আলোচনার পর মার্কিন প্রশাসন ইউক্রেনের সামরিক সহায়তা বন্ধ করে দিয়েছিল। তবে জেদ্দায় অনুষ্ঠিত বৈঠকের পর মার্কিন প্রেসিডেন্ট কিছুটা নমনীয় মনোভাব দেখিয়েছেন এবং যুদ্ধবিরতির বিষয়ে আলোচনা গতি পেয়েছে।
ইউক্রেনের নিরাপত্তা ও চাহিদা
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি যুক্তরাষ্ট্রের কাছে কিয়েভের নিরাপত্তা নিশ্চিতের দাবি তুলেছেন। যদিও যুদ্ধবিরতি নিয়ে দুই পক্ষ ঐকমত্যে পৌঁছেছে, তবে ইউক্রেনের নিরাপত্তা নিশ্চয়তার বিষয়টি আলোচনায় আসেনি, যা ইউরোপীয় নেতাদের উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রো বলেছেন, নিরাপত্তা নিশ্চয়তা ছাড়া ইউক্রেন কোনো চুক্তিতে যাবে না। এছাড়া, জেদ্দা আলোচনায় ইউক্রেনের খনিজ সম্পদের লভ্যাংশ নিয়েও যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে।
যুদ্ধবন্দী বিনিময় ও শিশুদের ফিরিয়ে আনা
যুদ্ধবিরতির সময় যুদ্ধবন্দী বিনিময়, আটক বেসামরিক নাগরিকদের মুক্তি এবং রাশিয়ায় জোরপূর্বক স্থানান্তরিত ইউক্রেনীয় শিশুদের ফেরত পাঠানোর পরিকল্পনা রয়েছে।
জেদ্দা আলোচনার পর ট্রাম্প প্রশাসনের সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্ক রুবিও বলেছেন, এখন রাশিয়ার সিদ্ধান্ত নেয়ার পালা। রাশিয়া যদি এই সাময়িক যুদ্ধবিরতিতে সম্মত না হয়, তাহলে যুক্তরাষ্ট্রের নতুন প্রশাসনের সাথে তাদের সম্পর্ক আরও অবনতির ঝুঁকিতে পড়বে।

রাশিয়ার শর্তাবলী ও আপত্তি
রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধের অবসান এবং যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক পুনঃস্থাপনের জন্য বেশ কিছু কঠোর শর্ত দিয়েছে।
ক্রেমলিনের শর্তগুলো হলো:
- ইউক্রেন ন্যাটো সদস্যপদ প্রত্যাখ্যান করবে।
- বিদেশী সেনা মোতায়েন বন্ধ করতে হবে।
- ক্রিমিয়া ও অন্যান্য রুশ-অধিকৃত অঞ্চলকে আন্তর্জাতিকভাবে রাশিয়ার অংশ হিসেবে স্বীকৃতি দিতে হবে।
- ন্যাটোর পূর্বমুখী সম্প্রসারণ বন্ধ করতে হবে।
২০২২ সালে ইস্তাম্বুল আলোচনায় রাশিয়া দাবি করেছিল, ইউক্রেনকে স্থায়ীভাবে পরমাণু অস্ত্রমুক্ত রাষ্ট্র ঘোষণা করতে হবে এবং রাশিয়ার ভেটো ক্ষমতা থাকবে।
যদিও রাশিয়া এখনও আনুষ্ঠানিকভাবে এই শর্তগুলো প্রকাশ করেনি, তবে এই দাবি মেনে না নিলে যুদ্ধবিরতির আলোচনায় দুই পক্ষের মধ্যে অগ্রগতি সম্ভব নয়।
পরিস্থিতির ভবিষ্যৎ গতি
যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্তাবিত ৩০ দিনের যুদ্ধবিরতি ইউক্রেনের জন্য স্বস্তির বার্তা আনলেও, রাশিয়ার কঠোর শর্তের কারণে এটি বাস্তবে কার্যকর হতে পারে কিনা, তা নিয়ে অনিশ্চয়তা রয়ে গেছে।
বিশ্ব নেতারা এখন নজর রাখছেন ক্রেমলিনের পরবর্তী সিদ্ধান্তের দিকে।