পটুয়াখালীর বাউফলে যৌন হয়রানির শিকার হয়ে আত্মহত্যার পথ বেছে নিতে বাধ্য হয়েছে দশম শ্রেণির ছাত্রী নাজনিন জাহান কুমকুম (১৬)। শুক্রবার (১৪ মার্চ) বিকেলে উপজেলার শৌলা গ্রামে নিজের ঘরে ওড়না পেঁচিয়ে আত্মহত্যা করে সে। মৃত্যুর আগে একটি চিরকুট লিখে যায়, যেখানে তার মৃত্যুর জন্য অভিযুক্ত তাওসিন ও তার পরিবারকে দায়ী করা হয়েছে।

হয়রানির শিকার হওয়ার পরও কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি
স্থানীয়দের মতে, পূর্ব কালাইয়া হাসান সিদ্দিক মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির ছাত্রী কুমকুমকে একই বিদ্যালয়ের এসএসসি পরীক্ষার্থী রিয়াদুল ইসলাম তাওসিন (১৭) দীর্ঘদিন ধরে উত্ত্যক্ত করে আসছিল। পরিবার ও বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের কাছে অভিযোগ জানিয়েও কোনো প্রতিকার পায়নি কুমকুম।
বখাটের দুঃসাহস এতটাই বেড়ে গিয়েছিল যে সে কুমকুম ও তার এক সহপাঠীর ছবিতে কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য লিখে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দেয়। এই অপমান সহ্য করতে না পেরে চিরকুট লিখে আত্মহত্যা করে কুমকুম।
পরিবারের অভিযোগ: বিচারের অভাবেই প্রাণ গেল কুমকুমের
নিহতের মা জানান, “আমার মেয়ে খুবই লাজুক ছিল। বহুবার বখাটে তাওসিন তাকে কুপ্রস্তাব দিয়েছে। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও অভিযুক্তের পরিবারকে জানালেও তারা কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। ফেসবুকে আমার মেয়ের ছবি নিয়ে বাজে মন্তব্য করার পর সে লজ্জায় আত্মহত্যা করে।”
কুমকুমের বাবা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “আমার মেয়ে মৃত্যুর আগে চিরকুটে স্পষ্টভাবে তাওসিনকে দায়ী করেছে। আমরা এর কঠোর বিচার চাই।”
বিদ্যালয় প্রশাসন ও পুলিশের বক্তব্য
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবুল কালাম আজাদ বলেন, “আমাকে ঘটনা জানানো হয়েছিল আত্মহত্যার একদিন আগে। আমি অভিযুক্ত তাওসিন ও তার পরিবারকে ডেকে সাবধান করেছিলাম।”
বাউফল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. কামাল হোসেন বলেন, “অভিযুক্তকে গ্রেপ্তারের জন্য অভিযান চলছে। তাকে আইনের আওতায় আনা হবে।”
বিচারের দাবি উঠছে সর্বমহল থেকে
এ ঘটনায় স্থানীয় বাসিন্দারা বিক্ষোভ করেছে এবং প্রশাসনের দ্রুত পদক্ষেপের দাবি জানিয়েছে। একাধিক নারী অধিকার সংগঠনও দোষীর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করেছে।
কুমকুমের মতো আরও অনেক নিরীহ কিশোরী হয়রানির শিকার হচ্ছে, কিন্তু যথাযথ পদক্ষেপের অভাবে তারা সুবিচার পায় না। প্রশ্ন থেকে যায়, কুমকুমের আত্মহননের পরও কি প্রশাসন ব্যবস্থা নেবে, নাকি আরও অনেক কুমকুমকে একই পরিণতি বরণ করতে হবে?
Good Article