যৌতুক না দেয়ায় অন্য নারীকে বিয়ে!

কুড়িগ্রামের এক গ্রামে জন্ম নেওয়া খুশি খাতুনের জীবনের গল্প যেন বাস্তবের এক হৃদয়বিদারক চিত্র। মাত্র ১৩ বছর বয়সে, তিনি সামাজিক চাপ ও দারিদ্র্যের শৃঙ্খলে আবদ্ধ হয়ে বাল্যবিবাহের শিকার হন। স্বপ্ন ছিল লেখাপড়ার, কিন্তু বাস্তবতা তাকে ঠেলে দেয় বিবাহিত জীবনের এক অন্ধকার অধ্যায়ে।

বিয়ের পর শুরু নির্যাতনের কালো অধ্যায়

বিয়ের পর থেকেই খুশির জীবনে নেমে আসে নির্যাতনের ছায়া। যৌতুকের জন্য স্বামী ও তার পরিবারের অমানবিক আচরণ যেন তার প্রতিদিনের বাস্তবতা হয়ে দাঁড়ায়। একসময় স্বামী আরেকটি বিয়ে করে, যা খুশির জীবনে নতুন এক দুঃখের অধ্যায় যোগ করে। শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন সহ্য করতে করতে একসময় তিনি সিদ্ধান্ত নেন—এভাবে আর নয়!

নিজের অধিকারের জন্য লড়াই

শ্বশুরবাড়ির অত্যাচারের শিকার হয়ে খুশি বাবার বাড়িতে ফিরে যাওয়ার চেষ্টা করেন, কিন্তু তাকে বিভিন্নভাবে বাধা দেওয়া হয়। তবে তিনি হাল ছাড়েননি। আইনের আশ্রয় নিয়ে তিনি নিজের অধিকারের জন্য লড়াই শুরু করেন। তার এই সংগ্রাম কেবল নিজের জন্য নয়, সমাজের অন্য মেয়েদের জন্যও এক অনুপ্রেরণা হয়ে উঠেছে।

সমাজের পরিবর্তনের ডাক

খুশির কাহিনী আমাদের মনে করিয়ে দেয়, বাল্যবিবাহ কেবল একটি মেয়ের জীবনকেই ধ্বংস করে না, এটি পুরো সমাজের উন্নয়নকেও ব্যাহত করে। কুড়িগ্রামের মহিদেব যুব সমাজ কল্যাণ সংস্থা ও অন্যান্য সংগঠন এই সমস্যার বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে, যেন ভবিষ্যতে আর কোনো মেয়েকে খুশির মতো নির্মম পরিণতির শিকার হতে না হয়।

একটি নতুন ভোরের প্রত্যাশা

খুশি এখন সুবিচারের জন্য লড়াই করছেন। তিনি চান, তার মতো আর কোনো কিশোরী যেন বাধ্য হয়ে স্বপ্ন হারিয়ে না ফেলে। তার সংগ্রাম আমাদের সবাইকে মনে করিয়ে দেয়—একজনের সাহস পুরো সমাজ বদলে দিতে পারে। এখন সময় এসেছে বাল্যবিবাহের বিরুদ্ধে দাঁড়ানোর, যেন প্রতিটি মেয়ে তার জীবন নিজের শর্তে বাঁচতে পারে।

Arifuzzaman Sagor

একজন সাংবাদিক, শিক্ষাবিদ ও উদ্যোক্তা। তিনি বর্তমানে বাংলাদেশ টেলিভিশন (BTV)-এর সংসদ প্রতিনিধি এবং বাংলাদেশ প্রতিদিন-এর কলামিস্ট।

Scroll to Top